Baden Powell

ব্যাডেন পাওয়েল এর জীবনী

Robert Stephenson Smyth Baden-Powell
বিপির বংশ পরিচয়ঃ
 

স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বিপির পুরো নাম "রবার্ট ষ্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল"। তার জন্ম ১৮৫৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী লন্ডনের হাইক পার্কে। তার পিতা রেভারেন্ট প্রফেসর এইচ. জি. ব্যাডেন পাওয়েল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতের অধ্যাপক , বৈজ্ঞানিক ও ধর্মযাজক ছিলেন। বিপির মাতা ছিলেন ব্রিটিশ এডমিরাল ডাব্লিউ. টি. স্মিথের কন্যা হেনরিয়েটা গেসা।

বি.পি.র নানা এডমিরাল উইলিয়াম স্মিথ ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ক্যাপ্টেন জন স্মিথের বংশধর। আমেরিকার ও ভার্জিনিয়ার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যার অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 
বিপি সাত ভাই বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সের সময় ১৮৬০ সালে তার পিতা মারা যান।

বিপির বাল্যকালঃ
বি.পি. লন্ডন নগরীর চার্টার হাউস স্কুলে ১৮৭০ সালে ভর্তি হন। উক্ত স্কুলে শুধুমাত্র বনেদী পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ার সুযোগ পেত। ছাত্র হিসেবে তিনি মোটামুটি ছিলেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ভাল ফুটবলার হিসেবে পরিচিত হন। তা ছাড়াও তিনি অভিনয়, নাচ, গান, ছবি আঁকায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি উভয় হাতে সমভাবে লিখতে ও ছবি আঁকতে পারতেন। উল্লেখ্য যে, ১৮৭২ সালে চার্টার হাইস স্কুলটি গোড়ল মিং নামক স্থানে স্থানান্তর করা হয়। এইখানে তিনি স্কুলের পিছনে ঘন ও সবুজ বনানীতে

তার কৌতুহল মিটানোর জন্য প্রায়ই স্কুল চলাকালে সকলের অগোচরে জঙ্গলে প্রবেশ করতেন। যেখানে প্রবেশ করা স্কুল কতৃপক্ষের- জীবজন্তুর ভয়ে ছাত্রদের প্রবেশ নিষিদ্ব ছিল। সেখানকার পশু-পাখি, গাছ-উদ্ভিদ এক কথায় প্রকৃতি পর্যবেক্ষন করতেন। সেখানে প্রকৃতির সাথে তার এক নিবিড় সর্ম্পক গড়ে উঠে। তিনি জঙ্গলে প্রায় শিকার করতেন ও পাত্র ছাড়াই রানড়বা করে খেতেন- যা ছিল অতি কৌশলপূর্ণ। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও বাস্তব ব্যাঙ্গ চিত্র আঁকতেন।

বিপির সৈনিক জীবনঃ
বিপির ভাইয়েরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। তাকেও অক্সফোর্ডে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিপি এতে রাজি হলেন না। এতে পরিবারের সদস্যগণ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
 
তিনি সবার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ১৮৭৬ সনে সৈনিকে ভর্তি হন। ভর্তি পরীক্ষায় অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়ে ২য় স্থান অধিকার করায় তাকে স্যান্ডহ্যার্স্টে প্রচরিত সামরিক প্রশিক্ষন দেয়া থেকে
রেহাই দেয়া হয়েছিল ( যারা ১ম থেকে ৭ম স্থান পযর্ন্ত অধিকার করতে পারতেন তাদের এই সুযোগ দেয়া হত) ও তাকে ১৩তম হুসার্স সেনাদলে কমিশন পদে ”সাব লেফটেলেন্ট” হিসাবে সরাসরি যোগদান করেন এবং ১৮৭৬ সালের ৩ শে অক্টোবরে প্রথম বারের মতো ভারতের মাটিতে পা রাখেন। দিনের আলোয় কিংবা রাতের আধাঁরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সৈন্য পরিচালনার ব্যাপারে তার অসামান্য দক্ষতা ছিল। তার প্রখর বুদ্ধি ও সামরিক দক্ষতার স্বীকৃতি হিসাবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে
ক্যাপ্টেন পদে ও বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে একমাত্র বিপিই হলেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সর্বকনিষ্ট মেজর জেনারেল। বিপি সৈনিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার দক্ষিন আফ্রিকার বুয়দের সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধে বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দেন ও সফলতা লাভ করেন।

প্রায় ৪০ বছর পর “ওয়েমরী এমপায়ার জাম্বুরীতে” দক্ষিন আশান্ত স্কাউটরা অংশগহন করেন যাদের অনেকেরই বাবা ১৮৯৫ সালে দক্ষিন আফ্রিকায় ভারাটে সৈন্যদলে যোগদান করেছিল। সে সময় তারা বিপিকে “ক্যান্টাকী” বলে অভিন্দন জানিয়েছিলেন। এই ক্যান্টাকী মানে হলো “সেই বিরাট টুপিওয়ালা লোকটি”। উল্লেখ্য যে, বিপি আশান্তি অভিযানকালীন প্রমবারের মতো এ বিরাট কাউবয় টুপিটা ব্যবহার করেছিলেন। কারন এটি মাথায় দিলে মুখমন্ডল ও ঘাড়ের পিছনদিকটা প্রখর সূর্যের তাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখত ও বিস্তৃত কিনারা মুখ-চোখকে কাঁটার আচ থেকে রক্ষা করত।

১৮৮৭ সালেদ্বিতীয় বারের মতো বিপি দক্ষিন আফ্রিকায় নাটালের অভিযানের সময় প্রম বারের মত শুনতে পেলেন জুলুদের বিখ্যাত যুদ্ধের গান “এ্যাংগনিয়ামা”। এই কোরাস গানটি তাকে এতো আকৃষ্ট করেছিল যে, পরবর্তিতে তিনি এটাকে স্কাউটের কাছে খুব জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এক কথায় বিপি ছিলেন পাকা স্কাউট। এ সব তথ্য জানতে পেরে মাতা বেলিরা তার নাম দিয়েছিলেন “ইমপিসা” অর্থাৎ নিদ্রাহীন নেকড়ে। তিনি মাতা বেলিল্যান্ডে ( বর্তমান দক্ষিন রোডেশিয়া)-র যুদ্ধে জংলি সরদার দীনিজুলুকে পরাজিত করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ম্যাফেকিং এর যুদ্ধে ২১৭ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর জয় লাভ করেন।
 
বিপির বিবাহীত জীবনঃ
বিপির স্ত্রীর নাম ওলাভ সোয়েমস্। তার সাথে লন্ডন থেকে ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ হয়ে আমেরিকা যাওয়ার সময় ১৯১১ সালে ৪ঠা জানুয়ারী এস. এস. আর্কেডিয়ান নামক জাহাজে বিপির পরিচয় হয়। ২৯শে অক্টোবর ১৯১২ সালে তারা পরিনয়সূত্রে আবদ্ব হন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে- তাদের নাম পিটার, হিতার ও বেটী।

বিপির শেষ জীবনঃ
কেনিয়া শহরে নিয়েরী জায়গায় বাস করতেন । তার বাড়ীর নাম ছিল পেক্সতু। তিনি এই বাড়ীতে অক্টোবর ১৯৩৮ সন থেকে বসবাস করেন ও এই বাড়ীতে ১৯৪১ সালে ৮ই জানুয়ারী শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।

Post a Comment

0 Comments