Scout Promise, Scout Law and Scout Motto

স্কাউট প্রতিজ্ঞা,  স্কাউট আইন ও স্কাউট মটো 

 

স্কাউট আন্দোলন এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল। তার এই স্কাউট আন্দোলনের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে World Organization of the Scout Movement (WOSM ) বিশ্ব স্কাউট সংস্থা স্কাউটিং এর চারটি মৌলিক বিষয় চিহ্নিত করেছেন। সেগুলোঃ       

            ০১।  স্কাউটিং এর সংজ্ঞা ( Definition )

            ০২।  স্কাউটিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ( Purpose )

 

            ০৩।  স্কাউটিং এর মূলনীতি ( Principles )

 

            ০৪।  স্কাউট পদ্ধতি ( Method )

 

স্কাউটিং এর সংজ্ঞাঃ   স্কাউট হচ্ছে সামাজিক, সেবামূলক এবং অরাজনৈতিক আন্দোলন- যার মাধ্যমে শিশু, কিশোর ও যুবকদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। তাছাড়া এটি জাতি, বর্ণ,ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্যই উন্মুক্ত।

 

স্কাউটিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ স্কাউটিং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু,কিশোর - কিশোরীদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, এবং সামাজিক গুণাবলি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক, দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।

 

স্কাউটিং এর মূলনীতিঃ  স্কাউট আন্দোলন তিনটি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলোঃ

             ১। স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালন (আধ্যাত্মিক দিক )

            ২। নিজের প্রতি কর্তব্য পালন (সামাজিক দিক )          

            ৩। অপরের প্রতি কর্তব্য পালন (সামাজিক দিক ) 

 


 

স্কাউট পদ্ধতিঃ  স্কাউট পদ্ধতি একজন স্কাউটকে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে। স্কাউট পদ্ধতির উপাদানগুলো হচ্ছেঃ

         ১। প্রতিজ্ঞা ও আইনের চর্চা ও তার প্রতিফলন।

         ২। হাতে কলমে শিক্ষা।

        ৩। ছোট ছোট দল আকারে কাজ করা। (উপদল বা ষষ্ঠক পদ্ধতি )

         ৪। ক্রমোন্নতিশীল বিভিন্ন কার্যক্রম। (ব্যাজ পদ্ধতি )

         ৫। বয়স্ক নেতার সহায়তা।

         ৬। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ।

         ৭। প্রতিকী কাঠামো ও

         ৮। সামাজিক সম্পৃক্ততা।

 

একজন স্কাউটকে সর্বদা স্কাউটের মৌলিক বিষয়গুলো অনুসরণ করে চলতে হয়। কারণ এগুলো একজন মানুষের সুন্দর চারিত্রিক গুণাবলীর গুরুত্তপূর্ণ অংশ এবং দৈনন্দিন জীবনে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। একজন রোভার স্কাউটকে এমন ভাবে গড়ে উঠতে হয় যেন তার কথা,চলা ও কাজে সর্বত্র সেগুলোর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। তার জন্যই বিপি বলেছিলেন,“স্কাউটিং হলো একটি জীবন পদ্ধতি।”

একজন স্কাউট কথাটি দ্বারা একজন আদর্শ সুনাগরিক বোঝায়। 

  

প্রথম বিষয় স্কাউট প্রতিজ্ঞা। 

                কাব স্কাউটের প্রতিজ্ঞাটি হচ্ছেঃ (শুধুমাত্র কাব স্কাউটদের জন্য)


আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, 

সৃষ্টিকর্তা ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে 

প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করতে 

কাব স্কাউট আইন মেনে চলতে 

আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।


                 স্কাউটের প্রতিজ্ঞাটি হচ্ছেঃ


আমি আমার আত্মমর্যাদার উপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে,

সৃষ্টিকর্তা ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে,

সর্বদা অপরকে সাহায্য করতে,

স্কাউট আইন মেনে চলতে

 আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

 

ইংরেজিতেঃ    

 On my honour, I promise that I will do my best

to do my duty to Creator and my country,

to help other peoples at all times and

to obey the scout law.

 

স্কাউট প্রতিজ্ঞাটির দিকে লক্ষ্য করলে কিছু বিষয় চোখে পড়বে। সেগুলো হলোঃ

            ১। আত্মমর্যাদা,

            ২। সৃষ্টিকর্তা ও আমার দেশের প্রতি কর্তব্য পালন,

            ৩। অপরকে সাহায্য করা ও

            ৪। যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

 

আত্মমর্যাদাঃ  আত্মমর্যাদা একজন মানুষের একান্ত আপন বিষয়। একজন মানুষের চারিত্রিক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই হল আত্মমর্যাদা। স্কাউটিংয়ে আত্মমর্যাদার অর্থ সৎ ও সত্যবাদী। একজন স্কাউট হিসেবে তার আত্মমর্যাদা এমন হবে যে এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে কেউ তাকে যে কোনভাবে বিশ্বাস করতে পারে । সত্য বলে সে যা বিশ্বাস করে এবং যা স্বীকার করে ঐ কাজ করতে সে প্রাণপণ চেষ্টা করে । আর এই আত্মমর্যাদাই হল স্কাউট চেতনার প্রধান উৎস।

 

স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য পালনঃ আমাদের প্রথমে চিনতে হবে স্রষ্টাকে। তার সৃষ্টিকে উপলব্ধি করে। আকাশ-বাতাস, সাগর-নদী, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, পশু-পাখি, কীট পতঙ্গ আমাদের চারপাশে প্রকৃতির যা কিছু আসে সব কিছু স্রষ্টাই মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। সৃষ্টির একজন হিসেবে সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণ সাধন করা, বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এর উন্নয়ন সাধন এবং সেই সঙ্গে নিজের মনের প্রসার ঘটিয়ে অপরের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সৃষ্টিকে ভালবাসা এবং তার উৎকর্ষ সাধন করা একজন মানুষের অন্যতম কর্তব্য। সৃষ্টিকে ভালবাসার মাধ্যমে স্রষ্টাকে ভালবাসা যায় । এভাবে মানুষ এ বিষয়টি তখন উপলব্ধি করবে যখন তার মনে জেগে উঠবে স্রষ্টার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা।

 

দেশের প্রতি কর্তব্য পালনঃ  একটি জাতির আবাসভূমি হচ্ছে দেশ । ইসলামে মাতৃভূমি ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে মা ও মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও বড়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ শাশ্বতকাল থেকে অকাতরে হাসিমুখে নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে দেশের সম্পদের অপচয় রোধ করা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, নিজের স্বার্থের চেয়ে সমষ্টির স্বার্থকে বড় করে দেখা এবং তাদের কল্যাণ করা, এরূপ কোন কাজ করাকে দেশের কাজ করা বা দেশের প্রতি কর্তব্য পালন বোঝায়। একজন রোভার স্কাউট হিসাবে দেশের প্রতি কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সত্যিকারের একজন দেশপ্রেমিক আদর্শ নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে।

 

সর্বদা অপরকে সাহায্য করাঃ শ্রেষ্টাকে ভালবাসতে হলে স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসতে হয়। স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। মানুষ মানুষকে ভালবেসে একে অপরের প্রয়োজনে এগিয়ে যাবে ও সাহায্য করবে। একজন মনিষীর ভাষায় “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর"। ঈশ্বর অর্থাৎ স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে যার প্রাণ আছে, জীবন আছে, অনুভূতি, সুখ ও দুঃখ আছে, তাদের ভালবাসা, তাদের সাহায্য বা উপকারের মাধ্যমে স্রষ্টার সপ্তুষ্টি লাভ করা যায়। "মানুষ মানুষের জন্য এটি কেবলমাত্র চিরন্তর বাণী নয়, সভ্য মানুষের জন্য এটি একটি অঙ্গীকার বলা যেতে পারে । মানুষ অপর মানুষের উপকার করবে, যা দ্বারা প্রস্ফুটিত হবে মানুষের মানবতা।

 

যথাসাধ্য চেষ্টা করাঃ একটি কাজ করতে গেলে নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি দেখা দিতে পারে। ফলে আন্তরিকতা থাকলেও অনেক সময় একজন যেভাবে কাজটি করতে চাচ্ছে, অবস্থার প্রেক্ষিতে সে সেই কাজটি সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পারে না। তবুও কাজটি সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য নিজের সাধ্যনুযায়ী আন্তরিকতা নিয়ে কাজটি শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এরই অর্থ হল, যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

 

 

এরপর জেনে আসি আসি স্কাউট আইনগুলো কি কি। মূলত স্কাউট আইনকে সাতটি। তবে ​কাব স্কাউটদের জন্য দুইটি আইন রয়েছে। 

    কাব স্কাউট আইনঃ (শুধুমাত্র কাব স্কাউটদের জন্য)

             ১। বড়দের কথা মেনে চলা।

            ২। নিজেদের খেয়ালে কিছু না করা।
 
                 

     

    স্কাউট আইনঃ (স্কাউট, রোভার স্কাউট ও এডাল্ট লিডারদের জন্য)

            ১। স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী,(A Scout's honour is to be trusted)

            ২। স্কাউট সকলের বন্ধু,(A Scout is a friend to all)

            ৩। স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত,(A Scout is courteous and obedient)

            ৪। স্কাউট জীবের প্রতি সদয়,(A Scout is a kind to animals)

            ৫। স্কাউট সদা প্রফুল্ল,(A Scout is cheerful at all times)

            ৬। স্কাউট মিতব্যয়ী,(A Scout is thrifty)

            ৭। স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল (A Scout is clean in thought, word and deed)

 

স্কাউট আইনগুলো সংক্ষেপে মনে রাখার জন্য আমরা সর্বদা একটি ছন্দ ব্যবহার করে থাকি। সেটি হচ্ছেঃ  

 

বিশ্বাসী-বন্ধু-বিনয়ী-সদয়

 

প্রফুল-মিতব্যয়ী-নির্মল রয়।

 

 

স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসীঃ প্রতিটি মানুষের আত্মসচেতনতা ও আত্ম উপলব্ধি তাকে আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। আত্মমর্যাদাহীন একজন মানুষ নিজের এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর কোন কাজ করতে পারে না। কারণ স্বাভাবিক উপলব্ধি সচেতনতা আর কর্তব্যবোধ থেকেই আত্মমর্যাদার সৃষ্টি। একজন রোভার স্কাউট তাই তার সমস্ত কাজকর্মে, দায়িত্বে ও কর্তব্যে সচেতনতা থেকে আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে গড়ে ওঠে। আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী একজন রোভার স্কাউট জীবন ধারার স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলে।

 

স্কাউট সকলের বন্ধুঃ একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে একজন স্কাউট সবার মঙ্গলের জন্য সৎপথে একটি আদর্শ শক্তি হিসেবে কাজ করে। একজন স্কাউট মানেই তার কাজ আর ভালবাসা দিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নেওয়ার একজন মানুষ। কল্যাণকর কর্ম প্রচেষ্টা সবার কাছে যখন একজন রোভার স্কাউটকে আপনজন আর প্রিয় করে তুলবে, তখন একজন রোভার স্কাউট সকলের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হয়ে নিজের পূর্ণতা অর্জন করবে।

 

স্কাউট বিনয়ী ও অনুগতঃ  বিনয় মানুষকে মহান করে। বিনয় যে কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে প্রতি মুহূর্তে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। একজন রোভার স্কাউটকে তাই বিনয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে প্রাচীনকালে নাইটরা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়েও বিনয়ী ছিলেন। সর্বসাধারণ তাদের ভালবাসত। নারী, শিশু, বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের সাথে বিনয়ের সাথে সাথে যথাযথ অনুগত আচরণই একজন রোভার স্কাউটের জীবনের পাথেয়। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ, যারা দেশের মঙ্গলময় কাজের প্রতিনিধি, নিয়োগকর্তা অথবা অধীনস্থ, সবার প্রতি-অনুগত আচরণ রোভার স্কাউটকে অধিকতর জনপ্রিয় করে তুলবে।

 

স্কাউট জীবের প্রতি সদয়ঃ স্রষ্টার কাছে তার সৃষ্টি অত্যন্ত প্রিয়। তাই সৃষ্টিকর্তার ভালবাসা পেতে হলে তার সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে। স্বল্পকালীন এ জীবনে সবাই মিলে এই পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য, আরও উপভোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে । বিশেষ করে একজন মানুষ হিসেবে অন্যান্য জীবজন্তুর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাদের প্রতি অন্যায় বা নির্মম ব্যবহার সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য পালনে অনিচ্ছার পরিচায়ক। একজন রোভার স্কাউটকে হৃদয়বান এবং বড় মনের অধিকারী হতে হবে।

 

স্কাউট সদা প্রফুল্লঃ যে কোন বিপদে বা সমস্যায় প্রফুল্ল ভাব মানুষের বিপদ আর সমস্যা সমাধানের পথে সুগম করে। উৎফুল্ল চিত্তে ধীরে সুস্থে মানুষ বুদ্ধি খাটিয়ে সম্যক সমাধান পেয়ে যায়। একজন রােভার স্কাউটকে তাই সব সময় প্রফুল্ল থেকে সাহসী আর আশাবাদী হয়ে জীবন যুদ্ধের বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে।

 

স্কাউট মিতব্যয়ীঃ একজন রোভার স্কাউটকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। কেবলমাত্র আজকের আনন্দ উল্লাসের কথা ভাবলে চলবে না। সময় ও সম্পদকে আগামী দিনের জন্যও সঞ্চিত রাখতে হবে। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যবহার করতে হবে । বাকীটুকু থাকবে সঞ্চয় যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে । সৃষ্টিকর্তা অপব্যয়ীকে ভালবাসে না। তাই একজন রোভার স্কাউট মিতব্যয়ী হয়ে প্রাপ্ত সুবিধা ব্যবহার করবে, কোন কিছুরই অপব্যয় করবে না ।

 

স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মলঃ একজন রোভার স্কাউট পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর মনের অধিকারী হবে। সেই সঙ্গে কাজ ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্যের কাছে আদর্শ একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যেন একজন রোভার স্কাউটের চাল-চলন ও আচার-আচরণ অন্যজন উদ্বুদ্ধ হয়ে অনুসরণ করে।

 

 

একজন স্কাউট তার প্রতিজ্ঞা ও আইন কিভাবে প্রয়োগ করবে সেটা নির্ধারণ করতে তৈরি হয়েছে স্কাউট মটো বা স্কাউটের মূলমন্ত্র। কাব স্কাউট,স্কাউট ও রোভার স্কাউটদের পৃথক পৃথক মটো রয়েছে।

 

কাব স্কাউটদের জন্য মটো হলো যথাসাধ্য চেষ্টা করা (Do your best),

স্কাউটদের জন্য মটো হলো সদা প্রস্তুত (Be prepared)

রোভার স্কাউটদের জন্য মটো হলো সেবা (Service)

 

স্কাউটের এই তিনটি মটোকে এক সাথে করলে আমরা পাইঃ

সেবার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা (Do your best to be prepared for service)

 

রোভার স্কাউটদের মটো হল সেবা। এর অর্থ খুবই ব্যাপক। বিপি সেবাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।

 

            ১। আত্মসেবা

            ২। আন্দোলনের সেবা ও

            ৩। সমাজের সেবা।

 

আত্মসেবাঃ এর প্রথম অংশটি আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা স্বার্থপরতার মতই মনে হয়। কিন্তু এর মূল কথাটি অনুধাবন করতে হলে আরও গভীরে দৃষ্টিপাত করতে হবে। এর অর্থ একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। অন্যের বোঝা না হয়ে, কারও করুণার পাত্র না হয়ে, নিজের শ্রম, বুদ্ধিমত্তা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আর এই লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করাও আত্মসেবার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একবার ভাল করে ভাবলে দেখা যাবে, একজন রোভার স্কাউট আত্মনির্ভরশীল হয়ে যদি জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে, তাকে অন্যের ওপর নির্ভর করে যদি চলতে হয়, তাহলে অপরের সেবা বা কোন বৃহত্তর কাজই সে করতে পারবে না। অতএব নিজেকে এমন উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে একজন রোভার স্কাউট সমাজের সাধারণ মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করতে পারে ।

 

আন্দোলেন সেবাঃ একজন রোভার স্কাউট স্কাউটিং এ নিজেকে যেমনি দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলবে ঠিক তেমনি তার অবসর সময়ে স্কাউট আন্দোলনে নবীন কাব স্কাউট/স্কাউটদের মধ্যেও স্কাউটিংয়ের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকেও দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যাতে তারা স্কাউটিংয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।

 

সমাজসেবাঃ শুধু নিজের কথা এবং নিজের আন্দোলনের কথা ভাবলেই চলবে না। প্রত্যেক রোভার স্কাউটকে পরিবারের কথাও ভাবতে হবে। ভাবতে হবে এই সমাজের কথা। নিজের পরিবারের সদস্যদের প্রতি যেমন তার কিছু দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি যে সমাজে সে বাস করছে তার প্রতিও কিছু করণীয় রয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে ভাবতে হবে কীভাবে দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য কাজ করতে পারে।

Post a Comment

2 Comments