বিপির ৬টি পি-টি
স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ব্যাডেন পাওয়েল স্বাস্থ্য রক্ষায় (বি-পি) খুব সহজ ছয়টি পি-টি প্রবর্তন করেন। সকল বয়সের মানুষের জন্য এই পি-টিগুলো উপযােগী। এমন কি দুর্বল ও ছােট বালকও স্বাস্থ্য রক্ষায় বিপি পি-টি করতে পারে। প্রতিদিন বি-পি পি-টি অনুশীলনের মাধ্যমে একজন স্কাউট নিজেকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
পি-টিগুলাে করতে প্রায় ১০ মিনিটের মত সময় নেয় এবং কোন প্রকার যন্ত্রপাতি ছাড়াই এই পি-টিগুলো করা যায়। এই পি-টিগুলাে অনুশীলনের সময় শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করা এবং প্রার্থনার বিষয়টি সঠিকভাবে সম্পাদন করতে হবে।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই এবং প্রত্যহ রাত বিছানায় যাওয়ার আগে
পি-টিগুলাে অভ্যাস করা উচিত। স্বল্প পরিচ্ছদ অথবা খালিগায়ে এবং মুক্ত
বাতাস অথবা খােলা জানালার কাছে পিটিগুলাে অনুশীলন করাটা খুবই উত্তম। পি-টি করার
সময় নাকের সাহায্যে নিশ্বাস গ্রহণ ও মুখের সাহায্যে ত্যাগ করার অভ্যাস করা শরীরের জন্য ভালো।
এই পি-টিগুলাে খালি পায়ে অনুশীলন করলে পায়ের পাতা ও আঙ্গুলগুলাে অধিকতর সবল হবে।
এক নম্বর পি-টি (মাথা ও ঘাড়ের জন্য):
প্রথমে দুই হাতের তালু ও আঙ্গুল দিয়ে কয়েকবার মাথা, মুখমন্ডল এবং ঘাড় ঘষে নিতে হবে। তারপর আংগুলগুলাে দিয়ে ঘাড় এবং গলার মাংশপেশী টিপে
নিতে হবে। ঘুম ভাংগার পর বিছানায় বা ঘরেও এ পি-টি করা যেতে পারে। তার পরে
চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে, দাঁত ব্রাস করে (মেজে), নাক, মুখ, ধুয়ে এক
গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করে পরবর্তী পি-টিগুলাে করতে হবে। (যদিও এই পি-টি-টি
১ নং পি-টি হিসাবে গণ্য করা হয়েছে কিন্তু সাধারণ পি-টি অর্থে যা বােঝায়
এটা তা না হলেও বি-পির পিটিগুলাের মধ্যে এটি প্রাথমিক এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ। ঘুম থেকে উঠে এ কাজগুলাে করে নিয়ে। পরবতী পি-টিগুলাে করতে হবে) পি-টি করার সময় সকল সঞ্চালন যতখানি সম্ভব ধীরে করতে হবে।।
দুই নম্বর পি-টি (বক্ষদেশের জন্য):
সােজা অবস্থা থেকে সামনের দিকে ঝেকে বাহু স্থির অবস্থায় সামনে নিচের দিকে
এমনভাবে ঝুলিয়ে দিতে হবে যেন অগ্রবাহুর পেছন দিকটা পাশাপাশি অবস্থায়
হাঁটুর সামনের দিকে থাকে। নিশ্বাস গ্রহণ করে ধীরে ধীরে হাত উপর দিকে উঠাতে
হবে। এ সময় নাক দিয়ে গভীরভাবে যতটুকু সম্ভব নিশ্বাস গ্রহণ করতে হবে। এরপর
হাত দুটো ক্রমান্বয়ে পেছন দিকে নিতে হবে এবং শব্দ করে দম ছাড়তে হবে।
স্রষ্টার এই মুক্ত বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক হবে। মুখে উচ্চারণ করতে হবে । “ধন্যবাদ”
(স্রষ্টার উদ্দেশ্যে)। এর পর আবার সামনের দিকে পূর্বের ন্যায় ঝুঁকে পরে
নিশ্বাস এমনভাবে ত্যাগ করতে হবে যেন সবটুকু বাতাস মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়।
এ সময় যতবার এরূপ করা হলাে সে সংখ্যা (বাংলা) উচ্চারণ করতে হবে। এই পি-টি
প্রত্যেক পি-টি-র বেলায় বয়সের তারতম্য অনুসারে ১২ বার করতে হবে। স্মরণ
রাখতে হবে, এই পি-টির মুল উদ্দেশ্য কাধ, বক্ষ, হৃৎপিন্ড এবং শ্বাসযন্ত্র সহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশের উন্নয়ন সাধন করা।
গভীরভাবে নিশ্বাস ত্যাগ ও গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিক মুক্ত বায়ু
গ্রহণ ফুসফুসের জন্য এবং রক্ত সঞ্চালনের জন্য খুবই প্রয়ােজন, বক্ষের আকার
বৃদ্ধিতেও এর প্রয়ােজন রয়েছে। কিন্তু এই পি-টি করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার
সাথে এবং কখনও এক নাগাড়ে অনেক বার করা যাবে না। যতখানি সম্ভব বুক বিশেষ
করে বুকের হাড় ও পেছন দিকটা পর্যন্ত ফুলে না উঠা পর্যন্ত নাকের সাহায্যে
বাতাস গ্রহণ করতে হবে। এভাবে এক বার শেষ করার পর পুনরায় পূর্বের ন্যায়
নাক। দিয়ে বাতাস গ্রহণ করতে হবে এবং পুনরায় ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে বাতাস
ছাড়তে হবে এবং এ ভাবেই যথার্থ নিশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের মাধ্যমে বক্ষ,
হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ও কণ্ঠনালীর সমভাবে উন্নয়ন। সাধন হয়।
তিন নম্বর পি-টি (পেটের জন্য):
এ পি-টির সময় সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে আংগুলগুলাে মুও রেখে দু’হাত সামনে
প্রসারিত করতে। হবে। তারপর কোমরের উপরিভাগ ধীরে ধীরে ডান দিকে ঘােরাতে হবে
যেন পা অর্থাৎ কোমরের নিম্নভাগ না নড়ে। এভাবে যতটুকু পারা যায় ডান দিকে
ঘােরাতে হবে। এ সময় ডান হাত যতটুকু পেছনে নেয়া যায় ততটুকু নিতে হবে ও
দু’বাহু এক বরাবর রাখার চেষ্টা করতে হবে যেন তা কাধের বরাবর থাকে। একই রকম
করে আবার ডান দিকে থেকে ধীরে ধীরে বাম দিকে ঘােরতে হবে। এভাবে ডান থেকে
বামে ও বাম থেকে ডানে ১২ বার করা আবশ্যক।
এই পিটি করার সময় সতর্কতার সাথে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হবে। নাকের
সাহায্যে বাতাস গ্রহণ করতে হবে ( মুখের সাহায্যে নয়)। ডান প্রান্তে হাত
নেয়ার সময় নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে। হবে। ডান প্রাপ্ত থেকে হাত দুটো একই
পদ্ধতিতে ক্রমান্বয়ে মুখের সাহায্যে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বাম দিকে নিতে
হবে। বাম প্রান্তে এসে নিঃশ্বাস ছাড়া শেষ করতে হবে। বাম দিকের শেষ
প্রান্তে পৌছার পর কতবার হলাে সেই সংখ্যা গুনতে হবে। সংখ্যা না গুনে
সৃষ্টিকর্তার প্রশংসাসূচক কোন শব্দও উচ্চারণ করা যায়। এভাবে ছয় বার ডান
দিকে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাস গ্রহণ করে বাম। দিকে যাওয়ার সময় নিশ্বাস
ত্যাগ করতে হবে। পরের ছয় বার বাম দিকে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাস গ্রহণ এবং
ডান দিকে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।
এই ব্যায়ামের ফলে অভ্যন্তরীণ অংগসমূহ বিশেষ করে যকৃত, অগ্নাশয় নড়াচড়া
করে এবং তাদের কাজ সহজ করে দেয়। এছাড়াও পাজর ও পাকস্থলীর চারপাশের বাইরের
মাংশপেশীকে সবল করে।
চার নম্বর পি-টি (মধ্য শরীরের জন্য):
সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথার উপর দিকে দু’হাত যতটুকু সম্ভব তুলে ধরে উভয়
হাতের আংগুলগুলাে সংযুক্ত করে ধরে পেছন দিকে ঝকে দাঁড়াতে হবে। তারপর খুব
ধীরে ধীরে বাহুসহ দেহের উপরিভাগ এমনভাবে। ঘুরিয়ে আনতে হবে যেন দেহের
চারদিক একটি প্রশস্ত বৃত্তাকারে ঘুরে আসে। কোমর থেকে দেহের উপরিভাগ একদিক
থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে তারপর আবার অপর দিক দিয়ে পেছনে পূর্বের।
অবস্থানে যেতে হবে। এই পি-টি কোমর এবং পাকস্থলীর পেশীর জনা অত্যন্ত
কার্যকর।
একদিক দিয়ে ৬ বার আবার অন্যদিক দিয়ে ৬ বার এই ব্যায়াম করতে হবে। এরূপ
করার সময় চোখের। দৃষ্টি যতদূর যায় তা দেখার চেষ্টা করতে হবে।। এই পিটি
করার সময় মনে এমন একটি অনুভূতি আনতে হবে দু’হাত যেভাবে আঁকড়ে ধরা আছে
তাতে মনে হবে যেন- বন্ধুদের অর্থাৎ অন্য স্কাউটদের সাথে করমর্দন আলিংগনে
আবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবার নুইয়ে। ঘােরার সময় ডান দিকে বাম দিকে সামনে এবং
পেছনে প্রত্যেক দিকে বন্ধুদের সাথে মিশে রয়েছি। সবাই। আমাকে ভালােবাসে,
সবার সাথে আমার বন্ধুত্ব রয়েছে। আমাকে এই বন্ধুত্ব স্রষ্টাই সৃষ্টি করে
দিয়েছেন । উপর দিয়ে ঘােরার সময় উপর দিকে তাকিয়ে স্বর্গীয় বায়ু গ্রহণ
করলে বেশ ভাল এবং চাংগা বােধ হবে। আর বৃত্তাকারে ঘুরে আসার সময় ভেতরের
বাতাস চারপাশে ছড়িয়ে দিতে হবে। নিচের দিকে নামার সময় নিঃশ্বাস ত্যাগ
করতে হবে এবং উপরের দিকে উঠার সময় নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে হবে।
পাঁচ নম্বর পি-টি (দেহের নিম্নভাগ এবং পায়ের পেছনের অংশের জন্য):
অন্য পি-টিগুলাের মত এই পিটির সাহায্যেও শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে হৃদপিন্ড,
ফুসফুসের উন্নয়ন ঘটে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সুন্দর রাখে।। এই পি-টির
জন্য সােজা হয়ে নিজেকে সর্বাধিক উঁচুতে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। দু’পা
পরস্পর থেকে কিছুটা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে এবং চিত্রের মত করে দু’হাতের কনুই
ভাজ করে আংগুলাে দিয়ে মাথার পেছনে দিকে স্পর্শ করে রাখতে হবে। সাথে সাথে
দেহের উপরিভাগ পেছন দিকে নুইয়ে দিয়ে আকাশের দিকে। তাকাতে হবে। আকাশের
দিকে তাকানাের সময় স্রষ্টার উদ্দেশ্যে এমন প্রার্থনা করা যায় “আমি
তােমার, আমার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত” । এ সময় নাক দিয়ে প্রাণভরে
বাতাস গ্রহণ করতে হবে (মুখে। বাতাস গ্রহণ করা যাবে না)
তারপর পুনরায় হাত উপরের দিকে দিয়ে হাঁটু সােজা রেখে মুখদিয়ে নিঃশ্বাস
ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে বাকা হতে হবে। এসময় হাতের আংগুলগুলাে দিয়ে
পায়ের আংগুল স্পর্শ করার চেষ্টা করতে হবে। তবে এ জন্য শরীর ঝাকানাের
প্রয়ােজন নেই বা কোন বল প্রয়ােগ করা যাবে।
এক্ষেত্রে যতটুকু পারা যায় ততটুকুই যথেষ্ট। এরপর ক্রমেই দেহ উপরে উঠাতে
হবে এবং পর্বের স্থানে নিয়ে যেতে হবে। এ সময় নাকদিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ
করতে হবে। এভাবে এই পিটি ১২ বার করতে হবে। এই পিটিতে পায়ের আংগুল স্পর্শ
করা মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলাে। পেটের পেশীগুলােকে নিয়ন্ত্রণে
রাখা ।
ছয় নম্বর পি-টি (পা, পায়ের পাতা এবং পায়ের অগ্রভাগের জন্য):
খালি পায়ে সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত কোমরে রাখতে হবে। পায়ের অগ্রভাগের
উপর ভর দিয়ে। দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে হাঁটু বাইরের দিকে ভাজ করে গােটা দেহ
সােজা রেখে নিচের দিকে নামতে হবে। এ সময় পায়ের গােড়ালি মাটি থেকে উপরে
থাকবে। এই পি-টির সময় পায়ের গােড়ালি পশ্চাৎ দেশে সামান্য স্পর্শ করবে।
আবার
ধীরে ধীরে নিচে থেকে উপরে উঠে পূর্বের ন্যায় দাঁড়াতে হবে। একে একে ১২ বার
করতে হবে।
নিচের দিকে নামার সময় মুখের সাহায্যে সংখ্যা গননা করতে করতে বাতাস ত্যাগ
করতে হবে। এবং উপরের দিকে উঠার সময় নাক দিয়ে বাতাস নিতে হবে। দেহের সমস্ত
স্তর সকল সময় পায়ের অগ্রভাগে পড়বে। হাঁটু বাইরের দিকে ভাজ করে বসলে
সহজে ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে।
এ পি-টি অভ্যাস করার সময় মনে রাখতে হবে এর মূল উদ্দেশ্য উরু, পায়ের পাতার
পেশী মজবুত করা এবং একই সাথে এটা পাকস্থলীর ব্যায়াম। সুতরাং এই পি-টি
দিনে একাধিকবার বা যে কোন। সময় করা যেতে পারে।
বিপি পি-টিগুলাে শুধুমাত্র সময় কাটানাের জন্য নয়। বরং এই পি-টিগুলাে শরীর গঠনে খুবই সহায়ক।
0 Comments